z
অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণ ব্যাংকগুলো আদায় করতে না পারায় নিয়মিত হিসাব থেকে প্রতিনিয়তই বাদ দিয়ে দিচ্ছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ অবলোপনের (রাইট অব) পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়ছে। মূলত আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে খেলাপি ঋণ অবলোপনের এই কৌশল প্রয়োগ করছে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোই অবলোপন করেছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ।
জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় থাকা মন্দমানের (কু-ঋণ) শ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণ আর্থিক বিবরণী (ব্যালেন্স শিট) থেকে বাদ দেয়াকে ঋণ অবলোপন বলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। নীতিমালার আওতায় ৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে থাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রেখে এবং মামলা দায়ের করে তা অবলোপন করতে হয়। একটি সময় মামলা দায়ের না করে কোনো ঋণ অবলোপন করা যেত না। তবে মামলার খরচের চেয়ে অনেকাংশে বকেয়া ঋণের পরিমাণ কম হওয়ায় ২০১৩ সালের শেষভাগ থেকে মামলা না করেই ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ অবলোপন প্রক্রিয়া চলছে পুরো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। এ প্রক্রিয়ায় মূল হিসাব থেকে অবলোপন করা ঋণ বাদ দিয়ে শেয়ার হোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। কারণ ব্যাংকের মুনাফা থেকে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হচ্ছে এসব ঋণের বিপরীতে। এতে লভ্যাংশ বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
সূত্রগুলো বলছে, অবলোপন করা খেলাপি ঋণ আদায়ে বিভিন্ন ব্যাংকে আলাদা সেল রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো ব্যাংকই ওই ঋণ আদায় করতে পারছে না। অন্যদিকে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম, রাজনৈতিক চাপ ও তদবিরে ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাছবিচার ছাড়া ঋণ অনুমোদন, বিভিন্ন অজুহাতে ঋণগ্রহীতা কর্তৃক সময়মতো ঋণ ফেরত না দেয়ার সংস্কৃতির কারণে প্রতি বছরই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। যার বড় অংশ নির্দিষ্ট সময়ান্তে মন্দমানের ঋণে পরিণত হচ্ছে। আর বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলোও শতভাগ প্রভিশন রেখে এসব ঋণ অবলোপন করে যাচ্ছে।