z
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ গার্মেন্ট পণ্যের ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল করেছেন বৈশ্বিক ক্রেতারা। এসব বাতিল করা পণ্য নেওয়া ও দাম পরিশোধে ওই সব ক্রেতা নিয়ম মানতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতা চেয়েছেন বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। একই সঙ্গে তিনি প্রবাসী শ্রমিকদের চাকরি নিশ্চিত ও বাজার সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে আইএলওকে এগিয়ে আবার অনুরোধ করেন।
সুইজারল্যান্ডের জেনভায় আইএলও ভার্চ্যুয়াল গ্লোবাল শীর্ষ সম্মেলনের 'কোভিড-১৯: ওয়ার্কিং টুগেদার টু বিল্ড ব্যাক বেটার' শীর্ষক অধিবেশনে শ্রমমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় বৃহস্পতিবার অংশ নিয়ে এই আহ্বান জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
দুঃখজনকভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় গত অর্থবছরে রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক মালিক কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। আবার অনেক প্রবাসী শ্রমিক তাদের চাকুরি হারিয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় গত মার্চ থেকেই দেশের রপ্তানির ওপর খড়্গ নেমে আসে। একের পর এক বাতিল হতে থাকে রপ্তানি আদেশ। যেসব পণ্য তৈরি হয়ে গেছে, কিংবা জাহাজীকরণের অপেক্ষায় বন্দর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, ওই সব পণ্যও নেননি ক্রেতারা। বাংলাদেশের রপ্তানির ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসাব অনুযায়ী প্রায় সোয়া ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশের মধ্যে পরবর্তীতে কিছু ফেরত এসেছে।
জানা গেছে, কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে দেউলিয়ার আবেদন করেছে, যাদের কাছে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মোটা অঙ্কের টাকা পাওনা।
সব মিলিয়ে এ পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েন রপ্তানিকারকরা। এরই মধ্যে শুধু গার্মেন্ট খাতেই ২৫ হাজারের উপরে শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে বলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) তথ্য বলছে। তবে শ্রমিক প্রতিনিধিরা বলছেন, এরই মধ্যে ছাঁটাই হয়েছে ৭০ হাজারের উপরে। শুধু তাই নয়, সদ্যঃসমাপ্ত অর্থবছরে রপ্তানি কমে গেছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ।
করোনা মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা হিসেবে অর্থনৈতিক ও সমাজের বিভিন্ন খাতের মানুষকে সহযোগিতা করতে ১ হাজার ২১০ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।পোশাক শ্রমিকদের মজুরির জন্য ১০০ কোটি ডলারসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসসহ প্রায় ৮০টি দেশের প্রতিনিধিরা অনলাইনে অংশ নেন।