z
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বিধান থাকা সত্বেও লিস্টিং না হওয়ার কারণ জানতে ১১টি বীমা কোম্পানির পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ব্যর্থতার দায়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে জরিমানা দেয়ারও বিধান রয়েছে বীমা আইনে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই এ জরিমানার অর্থ আদায় করতে পারছে না নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি। তাই ওই বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে।
তালিকাবহির্ভূত বীমা কোম্পানিগুলো হলোīŋŊ মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানফ্লাওয়ার লাইফ, বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স। স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকার বাইরে থাকা এসব কোম্পানির বেশির ভাগই ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে এখনো তাদের আর্থিক ভিত শক্তিশালী হয়নি।
জানা যায়, বৈঠকে কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি না হওয়ার কারণ জানতে চাইবে সংস্থাটি। একই সঙ্গে ব্যর্থতার দায়ে নির্ধারিত জরিমানার অর্থ পরিশোধে কালক্ষেপণের কারণ জানতে চাওয়া হবে। এ লক্ষ্যে শিগগিরই কোম্পানিগুলোর প্রধানদের বরাবর বৈঠকের বিস্তারিত তথ্যসহ চিঠি পাঠানো হবে। এমন অনেক কোম্পানি রয়েছে, যারা গত পাঁচ বছরেও কোনো জরিমানা পরিশোধ করেনি। নতুন বীমা আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্তিতে ব্যর্থ বীমা কোম্পানিগুলোর প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১১ সালে আইডিআরএ গঠিত হওয়ার আগে কোম্পানিগুলোকে দৈনিক ১ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হতো। তবে আইন করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে তা পালন করছে না বেশকিছু বীমা কোম্পানি।
সূত্রে জানা গেছে, কিছু কোম্পানি থেকে একদমই জরিমানা আদায় করা যাচ্ছে না। অনেকে পরিশোধ করলেও নিয়মিতভাবে না। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা থেকে কোম্পানিগুলোকে একাধিকবার চিঠিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় তালিকাভুক্তিতে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইডিআরএ।
আর্থিক দুর্বলতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাব ও অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনার কারণে শেয়ারবাজারে আসতে ব্যর্থ হয়েছে পুরনো কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে একাধিকবার আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও রহস্যজনক কারণে তা আর হয়নি। তবে বর্তমানে বীমা খাত যেভাবে বড় হচ্ছে, তাতে করে এসব দুর্বল মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, মূলত অভ্যন্তরীণ দুর্বল ও বিশৃঙ্খল অবস্থার কারণেই কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি চলছে। তাই বীমা আইন অনুযায়ী কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ ও ব্যবসা করছে কিনা এবং এক্ষেত্রে আইনের কোনো লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে শিগগিরই বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেবে আইডিআরএ। একই সঙ্গে কোনো বীমা পলিসির বিপরীতে কোম্পানির কর্মকর্তা বা পরিচালকদের স্বার্থ আছে কিনা এবং এক্ষেত্রে বীমা আইন মানা হয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে। কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় আইনি সীমার বাইরে কিনা এবং এজেন্ট কমিশন বাদে কোম্পানির পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো প্রকার কমিশন নিচ্ছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। কোম্পানিতে চেয়ারম্যান, পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কোনো পলিসি আছে কিনা, সেটিও তদন্ত করে দেখা হবে। এছাড়া কোম্পানিগুলোর শীর্ষ ২৫ বীমা গ্রহীতার হিসাব খতিয়ে দেখা হবে। এক্ষেত্রে আইনের কোনো লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা, তাও তদন্ত করবে নিরীক্ষক।
সূত্র জানায়, আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হলেও বাধ্যবাধকতার কারণে চার বছর আগে বাজারে শেয়ার ছাড়ার আবেদন জানায় ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স। তবে শর্ত পূরণ না করায় তালিকাভুক্তির অনুমোদন পায়নি কোম্পানিটি। এছাড়া ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারে ২৫ টাকা প্রিমিয়াম দাবি করে ২০১১ সালের অক্টোবরে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের আবেদন জানায় সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। পরবর্তীতে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সও তালিকাভুক্তির আবেদন জানায়। তবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) যাচাই-বাছাইয়ে সন্তোষজনক প্রতীয়মান না হওয়ায় তালিকাভুক্তির অনুমোদন মিলছে না তাদের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন জানান, পুরনো কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির বিষয়ে একাধিকবার বিআইএ থেকে তাগাদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বীমা বাজারের বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর একীভূতকরণের বিকল্প নেই।